মানবজীবনে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রভাব

একজন স্বাভাবিক মানুষের পুরোপুরি সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। একজন ব্যক্তির সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘুম একটি অন্যতম প্রধান নিয়ামক। ঘুমের অভাবে মানবশরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। 

মানবজীবনে-ঘুমের-প্রয়োজনীয়তা-ও-এর-প্রভাব

ঘুম মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্মপূর্ণ একটি অংশ। ঘুমের অভাবে যেসকল সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে অনিদ্রজনিত সমস্যা বলা হয়। মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের মরণঘাতী রোগ সৃষ্টির জন্য অনিদ্রা প্রত্যক্ষ বা পরক্ষভাবে দায়ী। 

তাই একজন পূর্ণবয়স্ক স্বাভাবিক মানুষের জন্য কমপক্ষে ৭ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে শরীরে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বয়সভেদে মানুষের শরীরে ঘুমের চাহিদা আলাদা হয়ে থাকে। যেমন- সাধারণ মানুষের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ৯ থেকে ১৩ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন, আবার সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু অর্থাৎ নবজাতক শিশুদের জন্য ১২ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। 

মানবজীবনে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রভাব

মূলত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের ঘুমের চাহিদা কমে যায়। তবে নবজাতকদের শরীরের নানা ধরনের অঙ্গানুর ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য তুলনামূলক বেশি ঘুমের দরকার হয়। গবেষকদের মতে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা ও রোগ সৃষ্টি হতে পারে । এ পর্যন্ত ১৫৩ টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে নানা ধরনের মরণঘাতী রোগের সৃষ্টি হয়।

অনিদ্রার কারণে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের কিছু সমস্যা নিম্নরূপ:-

(১) মানসিক চাপ সৃষ্টিঃ
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিনিয়ত ঘুমের ঘাটতির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক চাপ দেখা দেয় এবং এর ফলে হাই প্রেসার তথা উচ্চ রক্তচাপের মতো শারীরিক জটিলতার দেখা দেয়।

(২) যেকোনো কাজে অমনোযোগ সৃষ্টিঃ
রাতে সঠিক ভাবে ঘুম না হলে দিনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর ফলে দিনের বেলা মানবশরীরে অস্বাভাবিক অস্বস্তিবোধ তৈরি হয়। অসস্থিজনিত সমস্যার কারণে কোনো কাজেই মন দেয়া যায় না এবং যেকোনো কাজ থেকে মনোযোগ উঠে যায়। ফলে কর্মক্ষেত্রে এবং পড়ালেখায় অনিদ্রার ক্ষতিকর প্রভাব পরে।

(৩) শারীরিক সমস্যা সৃষ্টিঃ
অনিদ্রা ফলে অনিয়মিত রক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এই উচ্চ রক্তচাপ আবার ব্রেইন স্ট্রোক এর জন্যও দায়ী। আবার পর্যাপ্ত ঘুম তথা বিশ্রামের অভাবে অনেক সময় ডাইজেসনজনিত সমস্যার উদ্ভব ঘটে। আর হজমে সমস্যার ফলে কিডনি তথা বৃক্ক আমাদের শরীর হতে বর্জ্য পদার্থগুলোকে সঠিকভাবে বের করে দিতে পারে না। আর এর ফলে বহুমূত্র ( ডায়াবেটিস), কিডনি বিকল, বৃক্কে পাথর ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

(৪) ডাইজেশনে সমস্যাঃ
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের শরীরে হজমজনিত সমস্যা হতে পারে। আর হজমে সমস্যার ফলে কিডনি পর্যাপ্ত পরিমাণে বর্জ্য নিষ্কাশন করতে পারে না। ফলে পেটের পিরাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

(৫) দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ
মানবশরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য ঘুম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিমাণে ঘুম না হলে মানুষের শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। এর ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

ভালো ঘুমানোর জন্য যা যা করণীয়

১. ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য প্রতিদিনের রুটিন এ ঘুমানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে রাখতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২. পানির ওপর নাম হলো জীবন। তাই যেকোনো ক্ষেত্রে পানি আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয়। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে ভালোভাবে ঘুম আসে না। তাই দিনের বেলা বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। তবে হ্যাঁ, রাতে ঘুমানোর আগে বেশি পানি পান করা যাবে না।

৩. চা, কফি পরিহার করতে হবে। কারণ ঘুম না ধরার জন্য এই চা এবং কফি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী।

৪. ভালো ঘুমের জন্য ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারণ এ জাতীয় খাবার খেলে দেহে সেরেটোনিন তৈরি হয় আর এই সেরোটোনিন আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। দুধ, বাদাম, আখরোট, ডিম- এসকল খাবার ট্রিপটোফ্যান সম্মৃদ্ধ।

৫. ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন ডি ভালো ঘুমের জন্য অনেক কার্যকর। তাই ভিটামিন ডি এর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসতে হবে এবং এর পাশাপাশি ডিম খেতে হবে।

৬. সবসময় দুশ্চিন্তা করা যাবে না।

৭. দিনের বেলা কিছু শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। কারণ ব্যায়ামের ফলে শরীর ক্লান্ত হয় এবং অনেক সময় ক্লান্তি শরীরে ঘুমাতে ইচ্ছা করে।

৮. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। ম্যাগনেসিয়াম হলো এক বিশেষ ধরনের খনিজ পদার্থ যা আমাদের পেশীকে শিথিল রাখে এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সহায়তা করে। ডার্ক চকোলেট, অভোগাডো, কলা এইসব ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।

৯. মেলাটোনিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে ঘুম আসে। এর পাশাপাশি এ খাবার ঘুমকে দীর্ঘস্থায়ী করে। টমেটো, শসা, বেদনা ইত্যাদি মেলাটোনিন সমৃদ্ধ খাবার।

১০. মধু খাওয়া যেতে পারে। মধু শরীরে ইনসুলিন তৈরি করে। তাই মধু খেলে ঘুম ভালো হয়।


সাধারণ ওনিদ্রজনিত সমস্যার জন্য অকারণে ঘুমের ঔষধ খাওয়া ঠিক না। কারণ ঘুমের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। ঘুমের ঔষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কে স্নায়ুবিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব ঘুমের ঔষধ পরিত্যাগ করার চেষ্টা করতে হবে। আর উপরোক্ত নিয়মগুলো অবলম্বন করেও যদি কোনো ভালো ফলাফল না পাওয়া যায় তাহলে চিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায়, আজকের এই পোস্টটি হতে পারে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আপনি হয়তো এই পোস্টটি পড়ার পরে সতর্ক হবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি যারা কষ্ট করে এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এইরকম পোস্ট আরো পেতে আমাদের সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনি কি ধরনের কনটেন্ট চাচ্ছেন সেইটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। কোন তথ্যগত ভুল থাকলে তা ক্ষমা করে দিবেন এবং কমেন্ট এর মাধ্যমে সংশোধন করার সুযোগ করে দিবেন, আসসালামু আলাইকুম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url