ক্যালরিযুক্ত খাবারগুলো কি কি
খাওয়ার সময় কোনোদিনও ক্যালরি শব্দটি শোনেনি এমন লোক বোধহয় পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু জানেন কি ক্যালরি আসলে কি, ক্যালরি ঠিক কত ধরনের হতে পারে? ঠিক কোন খাবারগুলো ক্যালরিযুক্ত?
টাইটেল দেখে আপনারা বুঝতেই পেরেছেন আজকের ব্লগটি হতে চলেছে ক্যালরি নিয়ে। থাকবে ক্যালরি নিয়ে সুস্পষ্ট ধারনা এবং ক্যালরিযুক্ত খাবার নিয়ে বিস্তারিত।
সূচিপত্রঃ ক্যালরিযুক্ত খাবার কি কি
- ক্যালরিযুক্ত খাবার কি কি
- ক্যালরি কি এবং কেন প্রয়োজন
- ক্যালরির উৎস সাম্পর্কে ধারনা
- প্রতিদিন কত ক্যালরি গ্রহন প্রয়োজন
- ক্যালরির প্রকারভেদ
- কোন কোন খাবারে ক্যালরি থাকে
- ভালো ও খারাপ ক্যালরির মধ্যে ভিন্নতা
- ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালরিযুক্ত খাবার
- ওজন কমানোর জন্য ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ
- সঠিক ক্যালরি গ্রহণের গুরুত্ব
- মন্তব্য
১. ক্যালরি কি এবং কেন প্রয়োজন?
ক্যালরি হলো শক্তির একক যা আমাদের শরীরের সব ধরনের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন। আমরা যে খাবার ও পানীয় গ্রহন করি তা শরীরে ভেঙ্গে ক্যালরি উৎপন্ন হয় যা আমাদের চলাফেরা, হজম প্রক্রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস ও মস্তিষকের কাজ সহ সকল শারীরিক ও মানসিক কাজে এটি সাহায্য করে।
শারীরিক কার্যকালাপের জন্য, অভ্যন্তরীণ দাহক্রিয়ার জন্য, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের জন্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ এর জন্য আমদের ক্যালরি প্রয়োজন।
২.ক্যালরির উৎস সম্পর্কে ধারনা
আমরা প্রধানত ৪ ধরনের পুষ্টি উপাদান থেকে ক্যালরি পেয়ে থাকি -
* কার্বোহাইড্রেট : এক গ্রামে ৪ ক্যালরি (চাল, রুটি, আলু)
* প্রোটিন : এক গ্রামে ৪ ক্যালরি (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল)
* ফ্যাট : এক গ্রামে ৯ ক্যালরি (তেল, ঘি, বাদাম)
* অ্যালকোহল : এক গ্রামে ৭ ক্যালরি (শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩.প্রতিদিন কত ক্যালরি গরহন প্রয়োজন?
একজন ব্যাক্তির বয়স, লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক কার্যর উপর ভিত্তি করে ক্যালরির প্রয়োজনীয়তা নির্ধারিত হয়। সাধারনভাবে -
•পুরুষদের জন্য - দৈনিক ২০০০-২৫০০ ক্যালরি
•নারীদপর জন্য - দৈনিক ১৮০০-২২০০ ক্যালরি
•শিশুদের জন্য - দৈনিক ১২০০-১৮০০ ক্যালরি
•অ্যাথলেট না পরিশ্রমী ব্যাক্তিদের জন্য - দৈনিক ২৫০০ - ৩৫০০+ ক্যালরি প্রয়োজন।
৪.ক্যালরির প্রকারভেদ
ক্যালরি প্রধানত ২ প্রকারের হতে পারে।
* খাদ্য ক্যালরি
•এটি সেই ক্যালরি যা আমরা খাবার এবং পানীয় থেকে পাই।
•একে কিলোক্যালরি বা বড় ক্যালরি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।
• উদাহরণ : এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন থেকে ৪ ক্যালরি পাওয়া যায়।
* জৈবিক ক্যালরি
•এটি হচ্ছে আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হওয়া ক্যালরি।
•দেহের বিপাক ক্রিয়া, শ্বাস- প্রশ্বাসের জন্য এই ক্যালরি প্রয়োজন।
৫. কোন কোন খাবাত ক্যালরিযুক্ত
★কার্বোহাইড্রট জাতীয় খাবার
•চাল (সাদা বা ব্রাউন) - ১০০ গ্রামে প্রায় ১৩০-১৫০ ক্যালরি।
•রুটি (আটা-ময়দা) -১ টি রুটিতে ৭০ - ১২০ ক্যালরি।
•আলু - ১০০ গ্রামে ৮০-৯০ ক্যালরি।
•ওটস - ১০০ গ্রামে ৩৮০-৪০০ ক্যালরি।
•পাস্তা বা নুডলস - ১০০ গ্রামে ১৩০-১৫০ ক্যালরি।
★প্রটিনসমৃদ্ধ খাবার
•মুরগির মাংস - ১০০ গ্রামে ১৬৫ ক্যালরি।
•গরুর মাংস - ১০০ গ্রামে ২৫০-৩০০ ক্যালরি।
•ডিম - ১ টি সিদ্ধ ডিমে ৭০-৮০ ক্যালরি।
•মাছ - ১০০ গ্রামে ১৫০-২৫০ ক্যালরি
(ধরনভেদে পরিবর্তন হয়)
•ডাল ( মসুর, মুগ, ছোলা) - ১০০ গ্রামে ৩৫০-৪০০ ক্যালরি।
•বাদাম (কাজু, আমন্ড, চিনাবাদাম) - ১০০ গ্রামে ৫০০-৬০০ ক্যালরি।
★ফ্যাট ও তেলযুক্ত খাবার
•তেল ( সয়াবিন, অলিভ, নারিকেল) - ১ টেনিল চামচে ১২০ ক্যালরি।
•ঘি বা মাখন - ১০০ গ্রামে ৭০০-৮০০ ক্যালরি
•চিজ বা পনির - ১০০ গ্রামে ৩০০-৪০০ ক্যালরি
•ডার্ক চকলেট - ১০০ গ্রামে ৫০০-৬০০ ক্যালরি
★ফলমূল ও শাকসবজি
•কলা - ১ টি মাঝারি কলায় ৯০-১০০ ক্যালরি
•আম - ১০০ গ্রামে ৬০-৭০ ক্যালরি
•আপেল - ১০০ গ্রামে ৫০-৬০ ক্যালরি
•আঙুর - ১০০ গ্রামে ৭০ ক্যালরি
•শাকসবজি - ( ব্রকলি, পালংশাক, গাজর) - ১০০ গ্রামে ২০ - ৫০ ক্যালরি
★পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
•দুধ ( গরুর, ফুল ক্রিম) - ১ গ্লাসে ১৫০-২০০ ক্যালরি
•চা বা কফি (চিনি ও দুধযুক্ত) - ১ কাপ চা এ ৫০-১০০ ক্যালরি
•সফট ড্রিংক্স (কোলা, স্পর্টস ড্রিংক্স) - ১ ক্যান কোলায় ১৪০-১৫০ ক্যালরি
•আইস্ক্রিম - ১০০ গ্রামে ১৫০-২০০ ক্যালরি
•মিষ্টি ( রসগোল্লা, চমচম, জিলাপি) - ১ টুকরায় ১৫০-২৫০ ক্যালরি
৬.ভালো ও খারাপ ক্যালরির মধ্যে পার্থক্য
ভালো ক্যালরি :
* প্রাকপ্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার।
* দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে।
* এতে প্রোটিন, ফাইবার, ভালো ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।
* সুস্থ রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
উদাহরণ : বাদাম, ফলমূল, শাকসবজি, ডাল মাছ, ডিম, ব্রাউন, রাইস।
খারাপ ক্যালরি :
* প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড।
* ক্ষণস্থায়ী শক্তি দেয়, তারপর ক্লান্তি আসে।
* উচ্চ চিনি, প্রসেসড ফ্যাট, ও কৃত্রিম উপাদান থাকে।
* ওজন বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগের ঝুকি বাড়ায়।
* উদাহরণ : সফট ড্রিংক্স,কেক, বিস্কুট, ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার।
৭.ওজন বাড়াতে ক্যালরিযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত ওজন হওয়ার পাশাপাশি এমন অনেকেই আছে যারা ওজনহীনতায় ভোগেন। তাদের জন্য নিচের এই তালিকা :
* কার্বোহাইড্রেট - ভাত, রুটি, আলু, পাস্তা, ওটস।
* প্রোটিন - ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ডাল, গ্রিক দই।
* ফ্যাট - ঘি, মাখন, চিজ, বাদাম, অ্যাভোকাডো, অলিভ ওয়েল।
* ফল- কলা, আম, খেজুর, কিশমিশ, নারিকেল।
* পানীয় - ফুল ক্রিম দুধ, স্মুদি, প্রোটিন শেক।
এক্ষেত্রে পরিহার যোগ্য:
* অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড
*প্রসেসড খাবার
* অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার
৮. ওজন কমাতে ক্যালরিযুক্ত খাবার
ওজন কমানর জন্য কম ক্যালরিযুক্ত কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। এমন খবারগুল কম ক্যালরি সরবরাহ করলেও অনেক সময় ধরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পুষ্টিকর হয়।
* ডিম ( সিদ্ধ বা ভাপানো) - ১ টি ডিমে ৭০- ৮০ ক্যালরি।
* মুরগির মাংস ( চামড়া ছাড়া) - ১০০ গ্রামে ১৬৫ ক্যালরি।
* মাছ ( রুই, টুনা, স্যামন) - ১০০ গ্রামে ১৫০-২০০ ক্যালরি।
* ডাল ( মসুর, মুগ, ছোলা) - ১০০ গ্রামে ৩৫০-৪০০ ক্যালরি।
* গ্রিক দই ( চিনি ছাড়া) - ১০০ গ্রামে ৫৯ ক্যালরি।
এক্ষেত্রে পরিহার করা উচিত :
* সফট ড্রিংক্স এবং জুস - বেশি চিনি থাকে।
* ফাস্ট ফুড - বার্গার, চিজ, পিজ্জা মিষ্টিজাতীয় খাবার।
* তেলযুক্ত খাবার।
৯.সঠিক ক্যলরি গ্রহনের গুরুত্ব :
• শরীরের শক্তি সরবরাহ - দৈনন্দিন কাজ, ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন।
• সঠিক ওজন বজায় রাখা : কম ক্যালরি নিলে ওজন কমে।
• পুষ্টির ভারসাম্য : প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট নিশ্চিত করে সুস্থ রাখা।
• মানসিক সুস্থতা : মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সঠিক ক্যালরি দরকার।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা :পুষ্টিকর খাবার থেকে পাওয়া ক্যালরি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহনের ক্ষতিকর দিক :
• ওজন বৃদ্ধি - অতিরিক্ত ক্যালরি চর্বি হিসেবে জমে যা মোটা হওয়ার কারণ।
• ডায়াবেটিস - উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুকি বারে।
• হার্টের রোগের ঝুকি বাড়ে।
• পাচনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়।
• লিভারের সমস্যা দেখা দেয়।
• হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নষ্ট হয়।
মন্তব্য :
কথায় বলে - ব্যালান্সড ডায়েট, সুস্থ জীবন। আর সঠিক ক্যালরি গ্রহনই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। আমদের সুস্থতা এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য ক্যালরি অত্যাবশ্যকীয় হলেও মনে রাখবেন সঠিক পরিমানে ক্যালরি না খাওয়া বা মাত্রাতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন আমদের অপ্রত্যাশিত অসুস্থতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই খাবারের শুধু স্বাদ নয় পুষ্টির দিকেও নজর দিন।সঠিক পরিমানে খান, সুস্থ থাকুন। কারণ সাস্থ্য ভালো তো সব ভালো।
তো আজ এ পর্যন্তই। এমন আরও অনেক নতুন, আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয় বিষয় জানতে আমদের সাথেই থাকুন। আর অবশ্যই আজকের ব্লগটি আপনাদের কেমন লাগল তা জানাতে ভুলবেন না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url