ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা

   

কাজের চাপ ছাড়াও মাঝে মাঝেই কি ক্লান্ত লাগে? খাওয়া-দাওয়া তো সব ঠিকঠাক তার  পরেও কি  শরীরটা ঠিক ভাল ঠেকছে না? ওজন ও তো পারফেক্ট তাও কেমন যেন অলস হয়ে যাচ্ছেন? তাহলে বুঝতে হবে আপাতত ভাবে নিজেকে  সুস্থ মনে হলেও আপনার দরকার মানসিক সুস্থতা ও সঠিক ফিটনেস যা কেবল মেডিটিশন এবং  ব্যায়াম এই দুইটি জিনিসের মাধ্যমেই সম্ভব। 

ব্যায়াম-করার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

★ব্যায়াম ও ফিটনেস সম্পর্কে ভুল ধারণা :-


অনেকেই মনে করেন ফিটনেস মানেই কঠিন ডায়েট, আর ব্যায়াম মানে তো ঘন্টার পর ঘন্টা জিমে ঘাম ঝরানো। অনেকেই ব্যায়াম আর ফিটনেস বলতে বোঝেন না খেয়ে থাকা অথবা সারাদিন ওয়ট ট্রেইনিং করা। অনেকেই তো আবার এমন ভাবেন যারা মোটা ব্যায়াম কেবল তাদের জন্য। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তাহলে এখন প্রশ্ন হলো ⬇️
  
★ব্যায়াম ও ফিটনেস কি?? 
  
ফিটনেস বলতে শরীর ও মনের এমন এক অবস্থাকে বোঝায়, যেখানে মানুষ দৈনন্দিন কাজ সহজেই করতে পারে, ক্লান্তি কম হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। এটি শুধু শরীরে শক্তি বাড়ানোর বিষয় নায় বরং সামগ্রিক সুস্থতার একটি প্রতিফলন। 
অপরদিকে,
ব্যায়াম হল শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা 

নিশ্চিত করার জন্য শারীরিক এমন একটি রুপ শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সুস্থ জীবনধারা বজার রাখতে সহায়তা করে।
  
★ব্যায়াম তাহলে কাদের করা উচিত??
  
ব্যায়াম বয়স, লিঙ্গ, পেশা নির্বিশেষে সকলের সুস্থতার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ব্যায়ামের ধরন ভিন্ন হতে পারে।
  
★কারা ব্যায়াম করতে পারবেন না :-
  
যেহেতু ব্যায়াম শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে তাই এক্ষেত্রে, বয়ায়াম করতে পারবে না:-
  
১.গুরুতর হার্টের সমস্যায় ভুগছেন যারা 
  
হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এর মত সমস্যা 

থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করা উচিত নয়।
  
২.হাটুঁ বা জয়েন্টের সমস্যা থাকলে
  
আর্থাইটিস, হাড়ের ক্ষয় বা অপারেশনজনিত সমস্যায় ভারী ব্যায়াম বিপজ্জনক হতে পারে।
 
৩.গুরুতর ইঞ্জুরি বা অপারেশন পরবর্তী সময়
  
ফ্রাকচার, লিগামেন্ট ইঞ্জুরি বা অপারেশন এর পর বিশ্রাম এর প্রয়োজন হয়,,তাই এ সময় ব্যায়াম না করাই ভালো। 
  
৪.শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা থাকলে
  
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে।তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করা উচিত নয়।

৫.গর্ভাবস্থায় বিশেষ কিছু অবস্থা থাকলে
  
✅সাধারণত হালকা ব্যায়াম করা যায় তবে জটিল সমস্যা (যেমন:-উচ্চ রক্তচাপ, বা ব্লিডিং) ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করা উচিত নয়।
  
  
★কতক্ষণ ব্যায়াম করা উচিত?? 
  
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর তথ্য অনুযায়ী -
  
🔸প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ২০-৩০ মিনিট বা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। 
🔸সপ্তাহে ৭৫ মিনিট বা সপ্তাহে ২ দিন পেশি বৃদ্ধির ব্যায়াম করা উচিত।
🔸শিশু ও কিশোর কিশোরীদের দৈনিক ১ ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত। 

★ব্যায়ামের ধরন ও উপকারিতা
  
শরীরকে সুস্থ রাখতে এ পর্যন্ত ব্যায়ামের কোনো সীমারেখা তৈরি হয় নি। তাই ব্যায়াম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং প্রতিটি ব্যায়ামের নিজস্ব কিছু উপকারিতা রয়েছে। এখানে কিছু ব্যায়ামের ধরন অ তাদের উপকারিতা তুলে ধরা হলো ⬇️
  
১.কার্ডিওভাসকুলার বা অ্যারোবিক ব্যায়াম (Cardiovascular or Aerobic Exercise) 
  
▪️উদাহরণ :- দৌড়ানো, হাঁটা, সাইক্লিং, সাতার, জাম্পিং। 
  
▪️উপকারিতা :
  
•হার্টের ঝুকি কমায়
•ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে 

•শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়ায় 
• স্ট্যামিনা বা সহনশীলতা বৃদ্ধি করে 
•ক্যালরি বার্ন করে
•ওজন কমাতে সাহায্যে করে
•ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  
২.শক্তিবর্ধক বা ওয়েট ট্রেইনিং (Strength Training or Weight Training) 
  
▪️উদাহরণ :- ওয়েট লিফ্টিং, পুশ আপ, স্কোয়াট, ডেডলিফট। 
  
▪️উপকারিতা :
  
•পেশি শক্তিশালী করে
•হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে
•মেটাবলিজম বা বিপাকের হার বাড়ায়
•শরীরের ফ্যাট কমায় এবং পেশি বৃদ্ধি করে
•ইঞ্জুরি প্রতিরোধে সাহায্য করে

৩.নমনীয়তা বৃদ্ধি করা ব্যায়াম ( Flexibility Exercise) 
  
▪️উদাহরণ :- যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং
  
▪️উপকারিতা :
  
•শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে
•ইঞ্জুরি কমায়, বিশেষ করে পেশির টান
•মাংসপেশি শিথিল করে
•রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
•দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে
•মানসিক শান্তি ও সস্তি দেয়
  
৪.ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম (Balance Exercise ) 
  
▪️উদাহরণ :- এক পায়ে দাড়ানো, বসু বল ব্যায়াম, টাই চি

▪️উপকারিতা :
  
•শরীরের ভারসাম্য উন্নত করে
•পড়া বা ফেলার ঝুকি কমায়, বিশেষ করে বয়সকালে
•পেশি ও জয়েন্টের  শক্তি বৃদ্ধি করে
•স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  
৫.উচ্চতর  তীব্রতার আন্তঃব্যয়াম ( HIIT - High-Intensity Interval Training) 
  
▪️উদাহরণ :- স্প্রিন্টিং, ঝাপানো, বার্পি
  
▪️উপকারিতা :
  
•দ্রুত ক্যালরি বার্ন করে
•মেটাবলিজম বাড়ায় এবং শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে
•কম সময়ে বেশি ফলাফল পাওয়া যায় 

•সহনশীলতা ও শক্তি বৃদ্ধি করে
•হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
  
৬.যোগব্যায়াম (Yoga)
  
▪️উদাহরণ :- আসন, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
  
▪️উপকারিতা :
  
•মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি
•শারীরিক নমনীয়তা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে
•শ্বাস-প্রশ্বাসের দক্ষতা বাড়ায়
•স্ট্রেস কমায়
•রক্ত সঞ্চালন ও লিম্ফাটি সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়ায়
  
৭.পাইলেটস (Pilates)
  
▪️উদাহরণ :- পাইলেটস মেশিনে এক্সারসাইজ 

বা মাদুরে ভারসাম্য তৈরী করা।
  
▪️উপকারিতা :
  
•পেশি শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি করে 
•কোর পেশি বা মিড সেকশন শক্তিশালি করে
•শ্বাস-প্রশ্বাসের দক্ষতা উন্নত করে
•পিঠের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে
•শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং স্থিতিস্থাপক বৃদ্ধি করে
  
৮.কম্বিনেশন ব্যায়াম (Combination Exercise) 
  
▪️উদাহরণ :- সাঁতার ( কার্ডিও + শক্তি), সার্কিট ট্রেইনিং (কার্ডিও + শক্তি) 
  
▪️উপকারিতা :
  
•এক সঙ্গে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়ার জন্য 

উভয় ধরনের ব্যায়াম করা সুবিধা। 
•পেশি অ সহনশীলতা বাড়ায়
•দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক 
•মনোযোগ বৃদ্ধি ও মানসিক সস্তি প্রদান করে
  
  
★অতিরিক্ত ব্যায়ামের ক্ষতিকর দিক
  
⛔শারীরিক অবসাদ দেখা দেয়। শরির খুব দ্রুত শক্তি হারিয়ে ফেলে
⛔পেশিতে অতিরিক্ত টান লাগতে পারে যা muscle strain হিসেবে পরিচিত। 
⛔অতিরিক্ত ব্যায়ামে অনাকাঙ্ক্ষিত ইঞ্জুরি দেখা দিতে পারে।
  
★সর্বশেষে, 
  
সুস্থ দেহ মানেই সফলতার প্রথম ধাপ, আর ব্যায়াম হলো সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি। তাই কোনো অবস্র সময়ের সঙ্গী নয় বরং ব্যায়াম 

একটি বিনিয়োগ হওয়া উচিত যার সুদ পাওয়া যায় সুস্থ ও সুখী জীবন হিসেবে। তাই আসুন, নিজেকে ভালবাসি, সুস্থ জীবনের পথে হাঁটি। কারণ :-
  
 Exercise fortifies the body;
         Invigorates the soul 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url